বুলগুর পলাও এর পুষ্টিগুণ ও উপকারীতা

বুলগুর পলাও এটা আবার কি? নামও শুনিনি কখনো।জ্বি বুলগুর পলাও মধ্য প্রাচ্যের প্রচলিত বহু খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। পুষ্টিকর খাবারটি প্রস্তুত করা যেমনি সহজ তেমনি এর রয়েছে স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ উপকারী দিক। এই যেমন ধরুণ, ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হয়ে রুটি খেতে খেতে খাবারের প্রতি আপনার একরকম অরুচি চলে এসেছে। তাই রাতের অন্ধকারের কিংবা পরিবারের সদস্যদের অগোচরে আপনি আপনার পরিচিত সেই প্রিয় ভাত কিংবা পলাও এর খোঁজে রান্নাঘরে উঁকি ঝুঁকি দেন। কিন্তু রোগের ভয়ে আপনি বঞ্চিত হচ্ছে পলাও খাওয়া থেকে। বুলগুর পলাও হচ্ছে এমন একটি খাবার, যা আপনার খাবারের তালিকায় বৈচিত্র এনে অরুচিকে দূর করার পাশাপাশি আপনাকে মুক্ত রাখবে সুগার বেড়ে যাওয়ার আতঙ্ক থেকে। আজকে আমরা জানবো উপকারী এই খাবারের প্রধান উপাধান বুলগুর গম সম্পর্কে।

১। বুলগুর গম কি?

বুলগুর হ’ল একটি ভোজ্য শস্য যা শুকনো, ফাটানো গম থেকে তৈরি হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডুরুম প্রজাতির গমসহ অন্যান্য প্রজারিত গম থেকেও তৈরী করা হয়। এটি পানি এবং গমের সমন্বয়ে তৈরি অত্যন্ত মূল্যবান এবং পুষ্টিকর খাবার পণ্য, যা পরিষ্কার, সিদ্ধ, শুকনো, কুঁড়ি খোসা ছাড়িয়ে এবং বিভিন্ন ধরণের মিলগুলিতে পিষে বিভিন্ন আকারে উৎপাদন করা হয়। যা খনিজ সমৃদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সাশ্রয়ী কার্বোহাইড্রেট উৎস, পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ বুলগুর ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ভুত এবং হাজার বছর ধরে এটি ঐ অঞ্চলের খাবারের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আজ অবধি, এটি অনেক মধ্য প্রাচ্য, তুরস্ক এবং ভূমধ্যসাগরীয় খাবারগুলির একটি প্রধান উপাদান।

বুলগুর শস্য

২। বুলগুরের পুষ্টিগুণ:

কেবলমাত্র সুস্বাদু এবং দ্রুত প্রস্তুতকরণের জন্য নয়; বরং বুলগুরে রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ। কারণ এটি সামান্যতম প্রক্রিয়াজাত শস্য হওয়ায় অন্যান্য পরিশোধিত গম পণ্যগুলির চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টি মান বজায় রাখে। বুলগুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, খনিজের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। বুলগুর হ’ল ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।

এবার দেখুন এক কাপ (১৮২-গ্রাম) রান্না করা বুলগুরের পুষ্টি তালিকা:

  • ক্যালোরি: ১৫১ গ্রাম
  • কার্বস: ৩৪ গ্রাম
  • প্রোটিন: ৬ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০ গ্রাম
  • ফাইবার: ৮ গ্রাম
  • ফোলেট: আরডিআইয়ের ৮%
  • ভিটামিন বি 6: আরডিআইয়ের ৮%
  • নায়াসিন: আরডিআইয়ের ৯%
  • ম্যাঙ্গানিজ: আরডিআইয়ের ৫৫%
  • ম্যাগনেসিয়াম: আরডিআইয়ের ১৫%
  • আয়রন: আরডিআইয়ের ১৫%

৩। বুলগুরের স্বাস্থ্য উপকারিতাফাইবার সমৃদ্ধ দানাদার জাতীয় এই খাবারটি প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী গ্রহণে রোগ প্রতিরোধ এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিসহ একাধিক স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।

* কোলস্টোরেজ শূন্য : সাধারণ চাউলের পলাও কিংবা ভাবে প্রচুর পরিমান সুগার থাকলেও বুলগুর পলাও এর সবেচেয়ে বড় উপকারীতা হলো ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য জিরো কোলস্টোরেজ সমৃদ্ধ একট খাবার।

* হার্টের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে : যে কোন আঁশযুক্ত খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ হার্টের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বুলগুর এর মধ্যে অন্যতম।একটি গবেষণা থেকে জানা যায় প্রতিদিনের খাবারে ৯০-২২৫ গ্রাম বুলগুর গ্রহণে ২০% হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তথ্যসূত্র: (US National Library of Medicine, National Institutes of Health)

* রক্তে চিনি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে: বুলগুর অন্যান্য পরিশোধিত শস্যগুলোর তুলনায় রক্তে সুগারের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। বুলগুর গম ফাইবার এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস উভয়ের সমৃদ্ধ উৎস, যা আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে থাকে।

* হজম এবং পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি করতে সাহায্য করে: বুলগুরের নিয়মিত সেবন অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যা পরিপাকতন্ত্রে উন্নতি করে। এই ব্যাকটিরিয়াগুলি শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং সঠিক পরিমাণে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। বুলগারের মতো অত্যাধিক ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজম সমস্যার চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্যও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

* ওজন হ্রাসে সহায়তা করে: ওজন বৃদ্ধির পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও, অনেক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, অত্যাধিক ফাইবারযুক্ত খাবার ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। সামগ্রিকভাবে, ডায়েটরি ফাইবার ওজনকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা ঠিক এখনও স্পষ্ট না হলেও কিছু লোকের জন্য, আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে ক্ষুধার পরিপূর্ণতা পায় এবং ক্যালোরি গ্রহণ কমে যায়। যা ওজন হ্রাসে সহায়তা করে।

৪। বুলগুর কাদের খাওয়া উচিত নয়?

যে সকল ব্যক্তির গম জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলে এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে সাধারণত তারা বুলগুর গ্রহণে এলার্জিতে ভুগতে পারেন। তাই তাদের ক্ষেত্রে বুলগুর না খাওয়াই উচিত।

Related posts

Leave the first comment