চামিলিজা জামি: ইস্তান্বুলের অহংকার

তুরস্কের কোন সুলতান ভাস্কর্য নির্মাণ করেননি। প্রত্যেক সুলতান নিজের নামে নির্মাণ করেছেন মসজিদ। সুলতান আহমেদ জামি, সুলতান সুলাইমান জামি, বায়েজিদ জামি, সেলিমিয়া জামি।

শুধু সুলতান নয়, যুবরাজ, ভালিদে সুলতানা (রাজমাতা), পাশা ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাও নিজেদের নামে মসজিদ নির্মান করেছেন অসংখ্য মসজিদ। এক সময়ের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনোপলে এত বেশী মসজিদ নির্মান করেছিল ওসমানীরা যে, মসজিদের নগরী খেতাব পায় ইস্তান্বুল। পৃথিবীতে আরেকটি শহর শুধু এই সম্মান পেয়েছিল। মসজিদের নগরী ঢাকা।

ওসমানী সুলতানাতের পর আসে কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী এক দু:সময়। সেক্যুলার সামরিক শাসকেরা অবহেলা করে মসজিদের রক্ষনাবেক্ষণে। প্রতিটি শহরের স্কয়ারে নির্মান করা হয় ভাষ্কর্য। শত বছরের অবহেলা আর অনাদরে আড়াল পড়ে যায় ঐতিহাসিক মসজিদগুলো। কিছু মসজিদ হয় জাদুঘর।

১৯৯৮ সালে এরদোয়ান ইস্তাম্বুলের মেয়র হয়ে নজর দেন ঐতিহাসিক সব মসজিদের দিকে। ব্যাপক সংষ্কার কার্যক্রমের মা ধ্যমে মসজিদগুলো ফিরে পায় হারানো জৌলুস। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয় মসজিদ।

গত ৩ দশকে সারা দেশে হাজার হাজার মসজিদ নির্মান করেছে এরদোয়ান সরকার। মসজিদ নির্মান করেছে ইউরোপের প্রায় সব রাজধানীতে, আফ্রিকায়, মধ্য এশিয়ার সাবেক সোভিয়েত রিপাবলিকগুলোতে। এমনকি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে।

তবে এরদোয়ানের অমর কৃর্তি ইস্তাম্বুলের চামিলিজা জামি মসজিদ। সাত পাহাড়ের শহর ইস্তাম্বুলের সর্বোচ্চ পাহাড় চামিলিজায় একটি প্রকাণ্ড মসজিদ নির্মান ছিল এরদোয়ানের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। এমন একটি মসজিদ যা ইস্তাম্বুলের যে কোন স্থান থেকে দেখা যাবে। এমন একটি মসজিদ যার বারান্দা থেকে পুরো ইস্তাম্বুল দেখা যাবে।

যে মসজিদটি হবে ইস্তাম্বুলের মুসলিমদের সর্ববৃহৎ সম্মেলন কেন্দ্র। অনেক বাধা মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে মসজিদটির। এশিয়া কিংবা ইউরোপ, ইস্তান্বুলের যে কোন স্থান থেকে দৃশ্যমান এই মসজিদ।

কালের আবর্তে একদিন হারিয়ে যাবে এরদোনের শাসন, সময়। শত বছর পরও রয়ে যাবে চামিলিজা জামি। লাখো মুসলিমের তকবির ধ্বনী উচ্চারিত হবে উচ্চতম পর্বতের চূড়ায়। আল্লাহু আকবর।

আমার সৌভাগ্য হয়েছে অন্তত তিন বার এই মসজিদে নামাজ আদায়ের। আপনাদেরও যেন সুযোগ হয়, সে দোয়া রইল।

জাহিদুল ইসলাম সরকার।

Related posts

Leave the first comment